Wednesday, February 13, 2013

জন্ডিস



জন্ডিস (Jaundice) কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। এতে চামড়া চোখ হলুদ দেখায় কারণ শরীরে বিলিরুবিন নামে হলুদ রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। বিলিরুবিনের স্বভাবিক পরিমাণ < .0-. মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। এর দ্বিগুণ হলে বাইরে থেকে বোঝা যায়। কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যায়। চামড়া পাণ্ডুর বা ফ্যাকাশে দেখায় বলে একে আগে পাণ্ডুরোগ বলা হত। ভারতীয় উপমহাদেশে জন্ডিসের একটি প্রধান কারণ হল ভাইরাস ঘটিত হেপাটাইটিস


সদ্যজাত শিশুর স্বভাবিক জন্ডিস

অধিকাংশ মাতৃদুগ্ধপয়ী সদ্যজাত মানব শিশুর শরীরে জন্মের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন এক জন্ডিস হয়। একে সদ্যজাত শিশুর স্বভাবিক জন্ডিস(physiologic jaundice of the newborn) বলে। কিন্তু কিছুক্ষেত্রে বিলিরুবিনের ঘনত্ব খুব বেশী হলে এটি তাড়াতাড়ি শুরু হয় বা বেশীদিন চলে (স্বভাবিক, সাধাণতঃ -১০দিন) সেটি অস্বভাবিক | সদ্যপ্রসূত শিশুর জন্ডিস বর্তমানে বহুল আলোচিত। যা শুনলেই চমকে ওঠেন অভিভাবকরা। জন্ডিসের বাংলা শব্দ হলো ন্যাবা। অঞ্চলভেদে কমলাও বলা হয়। যকৃতের পিত্ত নিঃসরণক্রিয়ার স্বল্পতা অথবা অবরুদ্ধতাবশত রক্তের পিত্ত মিশ্রিত হয়ে শারীরিক রক্তের মধ্যে সঞ্চালিত হয়ে শরীরস্থ চর্ম, চোখের শ্বেত বর্ণ স্থান মূত্র পীত বর্ণ হলদে বা কমলা রঙের হলে ন্যাবা বা জন্ডিস বলে। শতকরা ৬০ ভাগ শিশুর জন্মের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জন্ডিস হয়ে থাকে।
 

হেপাটাইটিস এবং হেপাটাইটিস বি দুটি সংক্রামক রোগ। হেপাটাইটিস এবং হেপাটাইটিস বি দুটি সংক্রামক রোগ। হেপাটাইটিস বা সাধারণ জন্ডিস সাধারনতঃ খাবার পানি বাইরের খোলা জীবানুযুক্ত খাবার আহার করলে এবং আক্রা- ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে অথবা আক্রা- ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবহার করলে হেপাটাইটিস বা সাধারণ জন্ডিস সংক্রমিত হতে পারে। সাধারনতঃ বিশ্রাম কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চললে হেপাটাইটিস ভালো হয়। হেপাটাইটিস জন্ডিসের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন। দুটি ভ্যাকসিন দিয়ে হেপাটাইটিস রোধ করা যায়। আর এক ধরনের জন্ডিস হচ্ছে হেপাটাইটিস বি। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস থেকে এই রোগ সংক্রমিত হয়। জীবানুযুক্ত ইনজেকশনের সূই ব্যবহার জীবানুযুক্ত রক্ত সঞ্চালন, আক্রা- ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পকê এই রোগ সংক্রমনের প্রধান কারণ। এই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন রয়েছে। ৪টি ভ্যাকসিন দিয়ে হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধ করা যায়। তবে ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে সবচাইতে উন্নতমানের কার্যকর ভ্যাকসিন দিতে হবে, কমদামের অননুমোদিত ভ্যাকসিন দিবেন না। জেনে নেবেন ভ্যাকসিন ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদিত কিনা। সব সময় মনে রাখবেন অনেক অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফা লাভের আশায় অকার্যকর কমদামী ভ্যাকসিন বাজারজাত করছে। এসব ভ্যাকসিন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয় না।
 

বিশ্বে হেপাটাইটিসকে একটি মারাত্মক রোগ বলা হয়ে থাকে। ভাইরাসের কারণে হয় বলে একে ভাইরাল হেপাটাইটিস বলা হয়। সাধারণ অর্থে হেপাটাইটিস বলতে লিভার ফুলে যাওয়াকে বোঝানো হয়। এর ফলে দেখা দেয় লিভারে ইনফেকশন, সঙ্গে ইমিউন সিস্টেমের অবনতি এবং একপর্যায়ে অকার্যকর হয়ে পড়ে লিভার। হেপাটাইটিস ৫টি ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। ভাইরাসগুলো হচ্ছেহেপাটাইটিস-, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, হেপাটাইটিস-ডি এবং হেপাটাইটিস-ই।

হেপাটাইটিস ভাইরাসজনিত রোগে প্রতি বছর বিশ্বে ১৫ লাখ মানুষ মারা যায়। বিশ্বে প্রতি ১২ জনের মধ্যে জনেরবিঅথবাসিভাইরাস রয়েছে। যারা ভাইরাসে আক্রান্ত তাদের অনেকেই জানে না, তারা ওই ভাইরাসে আক্রান্ত। কিছু হেপাটাইটিস রোগ হলে তা আর ভালো হয় না। তাই সবার উচিত হেপাটাইটিসবিপ্রতিরোধক টিকা নেয়া।

ভাইরাল হেপাটাইটিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ধ্বংসাত্মক ভাইরাস হচ্ছে হেপাটাইটিসসি সাধারণত রক্তের মাধ্যমে প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। ১৯৮৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। হেপাটাইটিস সি লিভারের একটি মারাত্মক শত্রু। হেপাটাইটিস সি নামক ভাইরাসটি লিভার কোষ ধ্বংস করে ফেলে লিভার প্রদাহের সৃষ্টি হয় লিভারের কোষ ধ্বংস অব্যাহত থাকে। হেপাটাইটিস সি সংক্রমণের - বছরের মধ্যে এর কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায় না, ফলে ১০/১২ বছরের মধ্যে রোগী লিভার সিরোসিস লিভার ক্যাসারে আক্রান্ত হয়। অধিকাংশ রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতেই পারে না যে তার মধ্যে ঘাতক ভাইরাস লুকিয়ে আছে। জন্যই সি ভাইরাসকে বলা হয় নীরব ঘাতক।

লিভারের প্রদাহকে হেপাটাইটিস বলা হয়। বিভিন্ন কারণে ভিন্ন ভিন্ন দেশে হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। এর মধ্যে ভাইরাস, মদ্যপান, বিপাকের অসংগতি ইত্যাদি। বাংলাদেশে সাধারণত , বি, সি, ডি, ভাইরাসের মাধ্যমে লিভারের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। জন্ডিস দেখা দিলে রোগটি ধরা যায়। যদিও নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীর রক্তের সিরামে ভাইরাসের নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি উপস্থিত নিশ্চিত করতে হয়।

লিভারের রোগ-এই রোগে ভাইরাসের সৃষ্ট প্রদাহে লিভারের কোষগুলো স্ফীত হয়ে তাদের কর্মক্ষমতা হারায়। ফলে লিভারে বিলিরুবিনের শোধন হয় না, অপরিশোধিত বিলিরুবিন রক্তে জমে যায়। তাছাড়া বাইল বা পিত্ত নিঃসরণও বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পরিশোধিত বিলিরুবিনও শরীর থেকে বেরিয়ে না গিয়ে রক্তে জমে যায়।
 

 

No comments:

Post a Comment